,

বানিয়াচংয়ে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ :: অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর রেখে প্রবেশপত্র দিলেন অধ্যক্ষ

এস এম খোকন : হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে একমাত্র নারী শিক্ষার সূতিকাগার সুফিয়া মতিন মহিলা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কাসের নাম করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে কলেজের অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদ ভুইয়ার বিরুদ্ধে। এই অতিরিক্ত অর্থ না দেয়ার কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আটকিয়ে দিয়েছেন তিনি।
গত বুধবার (২ নভেম্বর) পরীক্ষার্থীরা তাদের প্রবেশপত্র আনতে গেলে অতিরিক্ত ক্লাসের টাকা না দিলে প্রবেশপত্র দেয়া যাবেনা বলে অফিস থেকে জানিয়ে দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহের কাছে উপস্থিত হয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। কলেজ জিবির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ তাৎক্ষনিক অতিরিক্ত টাকা না নিয়ে দ্রুত তাদের হাতে প্রবেশপত্র দেয়ার জন্য অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেন। তারপরও ওই অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদ ভুুইয়া পরীক্ষার্থীদের হাতে প্রবেশপত্র তোলে দেননি। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীর অভিভাবকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুুমূল আলোচনার ঝড় উঠে।
আগামী (৬ নভেম্বর) রবিবার থেকে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এবার বানিয়াচং উপজেলার সুফিয়া মতিন মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবে ৩ শ ৩০ জন শিক্ষার্থী। এই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের বেতন পর্যন্ত আদায় করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। অথচ আগস্ট মাস থেকে ক্লাস বন্ধ ছিল। কলেজ থেকে কোচিংয়ের জন্য ১ হাজার করে টাকা ধার্য্য করা হলেও কোন অতিরিক্ত ক্লাস না করিয়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১ হাজার করে টাকা নিতে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেন অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদ ভুইয়া। কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতিকে পাশ কাটিয়ে এমনকি কোনো সদস্যদের না জানিয়ে তিনি একক সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী জানান, আমাদের কোচিং বাধ্যতামূলক না। এই পরীা আরো আগেই হওয়ার কথা ছিল। তবুও চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করেছি। অন্য এক শিক্ষার্থী জানান, পরীক্ষা দিতে হলে তো প্রবেশপত্র আনতে হবে তাই খুব কষ্ট করে বাধ্য হয়েই ১ হাজার টাকা দিয়েছি। না হলে যে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবনা। তাছাড়া আমাদের কোন অতিরিক্ত ক্লাস করানো হয় নাই। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) যারা টাকা দিতে পারবে না তাদেরকে কলেজের প্যাডে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর রেখে শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ।
এ ব্যাপারে সুফিয়া মতিন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদ ভূইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রবেশপত্রর জন্য কোনো টাকা নেয়া হয়নি। টাকাটা অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য নেয়া হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ যদি না চায় সেটাও নিবনা। যাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে তাদের টাকাও ফেরত দেয়া হবে। এই ব্যাপারে কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি সব জানেন।
বিস্তারিত জানতে কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহের সাথে কথা হলে তিনি জানান, অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি শিক্ষার্থীরা আমাকে জানিয়েছে। আমি অধ্যক্ষকে কোন টাকা ছাড়াই প্রবেশপত্র দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। তারপরও যদি সে না দিয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর রেখে প্রবেশপত্র দিয়েছেন কাজটা তিনি ঠিক করেননি। আর এসব নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ আমার সাথে কোন বিষয় শেয়ার করে নাই।
প্রসঙ্গত, বানিয়াচং সুফিয়া মতিন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদ ভুইয়ার বিরুদ্ধে সভাপতিকে না জানিয়ে কলেজ শিক্ষার্থীদের পোষাক বদল, আইডি কার্ডের নাম করে টাকা আদায়, শিক্ষার্থীদের বেতনের রশিদ না দেয়া, ভ্রমন বিলের নামে ভুয়া ভাউচার করে কলেজ ফান্ড থেকে টাকা নেয়া, ঠিকমতো কলেজে না আসাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এগুলো নিয়ে বিগত গভর্নিংবডির সভায় সভাপতিসহ সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। খোদ কলেজ ফাউন্ডার সদস্যরাও তার এসব কর্মকান্ডে নাখোশ রয়েছেন। কলেজ অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদ ভুইয়ার এসব অনিয়ম ও অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার জন্য ইতিমধ্যে জিবি সদস্যদের দিয়ে অডিট করার জন্য কমিটি গঠন করে দিয়েছেন গভর্নিংবডির সভাপতি পদ্মাসন সিংহ।


     এই বিভাগের আরো খবর